তদন্ত রিপোর্ট, গোয়াইনঘাট প্রতিবেদক: সিলেটের জাফলংয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্পের পর থেকে জিরো পয়েন্টে যাওয়ার পুরোটাজুড়ে দোকান আর দোকান। সরকারি খাস-জমির উপর অস্থায়ী দোকান বসিয়ে রমরমা বাণিজ্য চললেও সেদিকে প্রশাসনের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। অবৈধ এসব দোকান থেকে নৈশপ্রহরীর (নাইট গার্ড) নামে বছরে সোয়া কোটি টাকা চাঁদা আদায় হচ্ছে। এসব টাকা চলে যাচ্ছে কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতার পকেটে। কোথাও রাস্তার একপাশে, কোথাও দুইপাশে দোকান।
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলে অস্থায়ী দোকানের বিশাল মার্কেট। একইভাবে বল্লাঘাট দিয়ে জিরো পয়েন্ট যাওয়ার পথেও একই চিত্র। ওপরে শামিয়ানা টানিয়ে এক হাজারেরও বেশি অস্থায়ী দোকান রয়েছে জাফলং পর্যটন কেন্দ্রে। এসবের কোনো অনুমোদন নেই। উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলে শুধু দোকানপাট থেকে বছরে কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা যেত। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের নজরদারি ও তদারকির অভাবে বড় আয়ের খাত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এখানে এক হাজার অস্থায়ী দোকান রয়েছে। কিন্তু এর বাইরে দুশ’র বেশি দোকান রয়েছে জাফলংজুড়ে। প্রতিটি দোকানের মালিক ২০০ টাকা করে চাঁদা দিলে এক হাজার ২০০ দোকান থেকে প্রতি সপ্তাহে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা চাঁদা ওঠে। সে হিসেবে ৫২ সপ্তাহ বা এক বছরে এক কোটি ২৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়। সরকারের খাসজমির ওপর নির্মিত দোকানপাট থেকে বছরে কোটি টাকার বেশি চাঁদা তুললেও তার কোনো তথ্য নেই গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের কাছে। বছরের পর বছর এই খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা থাকলে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
ব্যবসায়ীরা জানান- এখানে অস্থায়ী দোকান বসাতে প্রথমে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা দিতে হয় সমিতিকে। প্রতি সপ্তাহে নৈশপ্রহরীর বেতন বাবদ ২০০ টাকা চাঁদা তোলে সমিতি। এছাড়া বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও চাঁদা দিতে হয়।
সরেজমিনে- বিজিবির সংগ্রাম ক্যাম্পের নিচ থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামার পথে একপাশ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য দোকান। নিচে সমতল ভূমিতে আরেকটি বিশাল মার্কেট। ওপরে শামিয়ানা দিয়ে তৈরি এসব অস্থায়ী দোকান নিয়ন্ত্রণ করে জাফলং পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান- প্রতি দোকান থেকে সপ্তাহে ২০০ টাকা করে সমিতিকে চাঁদা দিতে হয়। কিন্তু বছর শেষে বা কমিটির মেয়াদ শেষ হলে এসব টাকার কোনো হদিস পাওয়া যায় না। সাধারণ সভা হলে কিংবা হিসাব-নিকাশ চাওয়া হলে কাকুতি-মিনতি করে টাকার হিসাব দেওয়া হয় না।
ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, সমিতির কয়েকজন নেতার পকেটে সব টাকা চলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কোনো ব্যয় হচ্ছে না। এ ব্যাপারে জাফলং পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হুসেইন মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সম্প্রতি আগের তুলনায় কিছু দোকান বেড়েছে। এজন্য নৈশপ্রহরীর বেতন বাবদ সপ্তাহে দোকানপ্রতি ১০০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। কিন্তু দোকান বসাতে কোনো টাকা লাগে না।’
নৈশপ্রহরীর বেতনের জন্য সপ্তাহে আড়াই লাখ টাকা লাগে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে হুসেইন মিয়া গণমাধ্যমে বলেন, ‘এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে জাফলং বসেন। এক জায়গায় বসে কথা বলি।’ পরে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ বিষয়ে সুষ্ঠু নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। শিগরই এটি কার্যকর করা হবে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ তৌহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন- ‘এখানে এক হাজারের মতো দোকান আছে। এগুলো কীভাবে চলবে, কারা ব্যবসা করবেন এটা নিয়ে একটা নীতিমালা খসড়া করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অনুমোদন পেলে এই নীতিমালার আলোকেই দোকান ভাড়া দেওয়া হবে এবং দোকান থেকে প্রাপ্ত আয় সরকারের কোষাগারে জমা হবে। এগুলো দিয়ে এই স্পটের উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে।’
চাঁদা আদায় বিষয়ে গোয়াইনঘাটের ইউএনও বলেন- ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এভাবে কারও চাঁদা তোলারও কথা নয়।’ এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply